এবারে রাজ্য সরকারের আর্থিক বরাদ্দের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে দেখা গেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদকে। এক্ষেত্রে জেলা পরিষদের সদস্যদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দ কম পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কাছে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার দরবার করার দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের সদস্যরা। আর এর পরেই তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতির তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে অতি শীঘ্রই তিনি রাজ্যের পঞ্চায়েত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দেখা করবেন।
বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনের পরেই জলপাইগুড়ি তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির পদ থেকে বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীকে সরিয়ে কৃষ্ণকুমার কল্যানীকে নতুন জেলা সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সভাপতি হওয়ার পরে এদিন প্রথম জেলা পরিষদে পদার্পণ করেন কৃষ্ণবাবু। জেলা পরিষদের তরফ থেকে সভাধিপতি উত্তরা বর্মন, সরকারি সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ এবং অন্যান্য তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সদস্যরা জেলা তৃণমূল সভাপতিকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেন। আর তারপরেই সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলা তৃণমূল সভাপতি।
আর এই বৈঠকের পরেই জেলা তৃণমূল সভাপতির তরফ থেকে জেলা পরিষদকে অর্থনৈতিক বরাদ্দের বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি জেলা সভাপতি হওয়ার পরে দীর্ঘদিন জেলা পরিষদে না আসার প্রসঙ্গেও মুখ খুলতে দেখা যায় তৃণমূল সভাপতিকে। এই বিষয়ে কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “সভাপতি হওয়ার পরে সশরীরে জেলা পরিষদে আসতে না পারলেও, সভাধিপতি থেকে শুরু করে, সহকারি সভাধিপতি ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রয়েছে।”
দেশে যে কোনো দিন ব্যান হয়ে যেতে পারে হোয়াটস্যাপ। তাই এখন থেকে আমরা শুধুমাত্র টেলিগ্রাম ও সিগন্যাল অ্যাপে। প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার নিউজ নিয়মিতভাবে পেতে যোগ দিন –
টেলিগ্রাম গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
সিগন্যাল গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, “জেলা পরিষদের সদস্যরা জানালেন, রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় জলপাইগুড়ি জেলাকে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব।” অন্যদিকে আবার জেলার উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, “উন্নয়নের কাজ যাতে সব এলাকাতে সমান ভাবে করা যায়, সেদিকে জেলা পরিষদকে গুরুত্ব দিতে বলেছি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে জেলা পরিষদের জমি দখল করে রাখা হয়েছে। দ্রুত সেই জমি উদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মঙ্গলবারের বৈঠকের পরে এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী মহাশয়।
অন্যদিকে আবার জেলা পরিষদের সদস্যদের তরফ থেকে জলপাইগুড়ি জেলার অন্যতম বিখ্যাত মেলা জল্পেশ মেলায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে আসার জন্য দাবি জানানো হয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতির কাছে। এই বিষয়ে কৃষ্ণবাবু বলেন, “জল্পেশ মেলাকে ঘিরে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে এক বিশেষ আবেগ রয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানাব।” গোটা বিষয়ে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ বলেন, “আমরা দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। জলপাইগুড়ি জেলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা অন্য জেলা পরিষদের তুলনায় আমরা কিছু কম পাচ্ছি। এই বিষয়ে দলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
জেলা সভাপতির কাছে অন্যান্য দাবিদাওয়া সম্পর্কে জেলা পরিষদের সরকারি সভাধিপতি আরও বলেন, জল্পেশ মেলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে মেলায় আসার জন্য দলের তরফে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।” কিন্তু রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত জেলা পরিষদের তরফ থেকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জেলার বিষয়ে বিমাতৃসুলভ আচরণ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলতে ছেড়ে দেননি রাজ্যের বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি। এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “সরকার তৃণমূলের, জেলা পরিষদও তৃণমূলের। সেখানে এই ধরনের অভিযোগ খুব বিস্ময়কর।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিভিন্ন জেলা পরিষদের আকার-আয়তন থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করার পরেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে উন্নয়নের খাতে আর্থিক বরাদ্দ করা হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে শাসকদলের তরফ থেকে যদি কোনোরকম অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে তা আশ্চর্যের কিছু নয়। কারণ রাজ্য সরকারের কাছে জেলা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে বিভিন্ন রকম দাবিদাওয়া থেকেই থাকে, তাই আগামী দিনে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির হস্তক্ষেপে জেলা পরিষদের সমস্যা কতটা সমাধানের পথে এগোয়! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।