
না আর সাহস হয়নি শ্রীর। শুয়েই আছে ঘরে। জ্বরটা আবার এসেছে। তবে খুব বেশি নয়। কিন্তু কি বলেছিলো শ্রী ? সত্যি বলেছে – আমি কেশবকে খুব ভালোবাসি ? অবশ্য না বললে রনো জানবে কি করে? কি করে জানলো রনো রাই কে? কি করে জানলো রনো শ্রীই রাই।
রনোর ইচ্ছা হয়েছে সে বেশ পিঁয়াজ, লঙ্কা দিয়ে ডিমের ওমলেট খাবে মিসেস মুখার্জী বানাচ্ছিলেন, কিন্তু একটা ফোন এলো তিনি চলে গেলেন। রনো বললো সেই বানাবে। শ্রী কে খেতে দিয়ে এলো অদিতি। শ্রী এত কিছু খাবে না। উঠে গেলো কিচেনে। যা যা খাবে না অন্য প্লেটে রাখছিলো দেখলো অনেক কিছু চেষ্টা করছে রনো কিন্তু ডিম্ উল্টাতে পারছে না। অদিতি আগেই বলেছিলো কিন্তু রনো বলেছে সে সব পারে অতএব যেন অদিতি নাক না গলায়।
শ্রী- সরুন।
রনো- আমি করছি।
শ্রী – এবার না উল্টালে পুড়ে যাবে।
রাহুল আর অদিতি ওদেরকে দেখছিলো।
রনো সরে গেলো। শ্রী ডিমটা উল্টে দিলো। রনো শ্রীকে দেখছিলো। ডিম্ হয়ে গেছে শ্রী প্লেটে তুলে দিয়ে রনোর হাতে প্লেটটা দিয়ে নিজের প্লেটটা তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।
রনো – এখানে আমাদের সঙ্গে খাওয়া যায় না।
শ্রী – আমি……………
কথা শেষ হলো না। দরজায় একজন বললো – সারপ্রাইস এই যে আমরা এসে গেছি।
শ্রী – দিদিভাই ,বলে প্লেটটা টেবিলে রেখে দরজায় কাছে এগিয়ে গেলো।
যিনি এসেছেন তার বয়স রনোদের থেকে কিছুটা বেশি।
শ্রী তার কাছে যেতেই তিনি শ্রীকে জড়িয়ে ধরে বললেন – কেমন আছিস বাবি।মা বললো তোর খুব জ্বর।
শ্রী- এখন ভালো আছি, দাদাভাই কোথায়?
আগন্তুক – আসছে।
রনো টেবিলে বসলো। কিছু ওদের চোখ আগন্তুকের দিকে। অদিতি চেনে যিনি এসেছেন তাঁর নাম প্রিয়াঙ্কা, মিসেস মুখার্জীর মেয়ে।
অদিতি উঠে গিয়ে বললো – হাই দি।
প্রিয়াঙ্কা – হাই , কেমন আছো?
অদিতি -ভালো তুমি?
প্রিয়াঙ্কা – ভালো। রনো আর রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো এরা? রাহুল আর রনো ?
রনো বললো – হাই ,আমি রনো। রাহুল আমি রাহুল।
প্রিয়াঙ্কা – হুম তোমাদের কথা শুনেছি খুব।
প্রিয়াঙ্কা বসলো। আর একজন ব্যাগ নিয়ে ঢুকলেন প্রিয়াঙ্কার হাসব্যান্ড অনিমেষ। বললেন – আমাকে একা ছেড়ে চলে এলে আমি যদি হারিয়ে যেতাম।
অদিতি – বললো ভাবনা নেই আমি আর শ্রী গিয়ে উদ্ধার করে আনতাম।
অনিমেষ – ভাগ্গিশ। আচ্ছা শাশুমা কোথায়?
রনো – আসলে আন্টির একটা ফোন এসেছিলো উনি ঘরে।
অনিমেষ একটু বোঝার চেষ্টা করল ইনিকে? প্রিয়াঙ্কা পরিচয় করিয়ে দিলো রনো আর রাহুলের সাথে।
অদিতি আন্টিকে ডাকতে গেলো।
অনিমেষ বললো – রনো কি শর্ট ফর্ম ?
রনো হুম, অরণ্য বলে হাত বাড়ালো।
প্রিয়াঙ্কা চমকে শ্রীর দিকে তাকালো। শ্রী বললো তোমরা বস আমি আসছি।
রনো খেয়াল করেছে সেটা। তার মানে প্রিয়াঙ্কাও চেনে রণকে।
শ্রী চলে গেলো। কিন্তু এবার রনো লক্ষ করলো প্রিয়াঙ্কার চোখের চাহুনি বদলে গেছে। একটু আগে যেভাবে দেখছিলো তার সঙ্গে এখনকার কোনো মিল নেই। দুটো ঘৃণা ভরা চোখ রনোর দিকে দেখছে। কিন্তু কেন?
মিসেস মুখার্জী হাজির হলেন। তোরা?
প্রিয়াঙ্কা একটু গম্ভীর হয়ে – হুম আমরা। আমি একটু আসছি।
মিসেস মুখার্জী অনিমেষকে জিজ্ঞাসা করলেন – কি হলো ওর আবার , এত রেগে কেন? আবার ঝগড়া হলো নাকি তোমাদের।
অনিমেষ বললো – বলতে পারবো না, ওকে ছাড়ো ।কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো?
মিসেস মুখার্জী জড়িয়ে ধরে বললেন – খুব ভালো। আমি তো ভাবতেই পারিনি। ওদের সাথে আলাপ হয়েছে।
অনিমেষ বললো – হুম , আচ্ছা এবার আমার দিকে নজর দাও। তোমার মেয়ে খেতে দেয়না, আমি কেমন রোগা হয়ে গেছি দেখেছো। শুধু স্যান্ডুইস আর ম্যাগি। খিদে পেয়েছে খেতে দাও। আচ্ছা শোনো , এখন কিছু একটা করে দাও। দুপুরে জমিয়ে খাবো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
অদিতি, রনো, রাহুলকে বাই বলে উপরের ঘরে চললেন। ওরা এলে উপরের ঘরেই থাকে।
রনোরা যা খাচ্ছিলো মিসেস মুখার্জী তাই করে দিচ্ছিলেন তাড়াতাড়ি করে। এদিকে রাহুল রনোর প্লেট থেকে ডিম্ নিয়ে গেলো রনো সরিয়ে নিয়ে বললো – এই স্বাদের ভাগ দেব না।
রাহুল – এখন থেকেই এমন করছিস?
রনো – পরের বার কিছু বলবো না, কিন্তু এটা নয়।
অদিতি হাসতে লাগলো।
মিসেস মুখার্জী বললেন কি হলো – হাসছো কেন?
রাহুল -ওই রনো ডিমের ভাগ দিচ্ছে না।
রনো তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিয়েছে পুরোটা। মিসেস মুখার্জী বললো -ইটা আবার কি হলো – তোমরা তো সব খাবারই ভাগাভাগি করে খাও। যাই হোক তোমাকে একটা ডিম্ ভেজে দেব।
রাহুল – না আর লাগবে না।
মিসেস মুখার্জী বলল – বোসো , বোসো। দিচ্ছি।
এই সময় প্রিয়াঙ্কা এলো। বললো – মা শ্রী আমার সাথে দিল্লি যেতে চাইছে। আমি ওকে নিয়ে যাবো আমার কাছেই ও থাকবে এবার থেকে।
কথাটা শুনে খাওয়া থেমে গেলো রনো, রাহুল, অদিতির।
মিসেস মুখার্জী – চলে যাবে মানে? এখানে ওর ইস্কুল আছে ? আগে তো যেতে চাইতো না হঠাৎ কি হলো ? আমাকে তো কিছু বলে নি।
প্রিয়াঙ্কা – আমার ওখানে ইস্কুল আছে, ওখানেই চাকরি করবে।
ফেসবুকে আমাদের নতুন ঠিকানা, লেটেস্ট আপডেট পেতে আজই লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
ফের রনোর দিকে সেই ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে দেখে একটা তাচ্ছিল্ল ভরা হাসি হেসে বললো – আমি উপরে যাচ্ছি মা। মনোহর সীতার বর ব্যাগ রেখে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো – ওর দিকে একটা মিষ্টি হাসি হেসে উপরে চলে গেলো।
আর গলা দিয়ে কোনো কিছুই নামছে না রনোর। চলে যাবে? কেন? রনো সব জেনে গেছে বলে? রণকে শ্রী ভালোবাসে তাহলে ওর সাথে থাকতে কিসের অসুবিধা? আবার কি লুকাচ্ছে ? কেনই বা প্রিয়াঙ্কা ওর দিকে ঐভাবে ঘৃণা ভরা চোখ নিয়ে তাকাচ্ছে ? না অদিতি, রাহুলের ও আর খাবারে মন নেই।
মিসেস মুখার্জী ঘুরে রান্না করছেন। রনো উঠে গেলো তিনি খেয়াল করলেন না। রনো শ্রীর ঘরে গেলো।
দরজাটা বন্ধ করে দিলো রনো। শ্রী বিছানায় বসে ছিল দরজা বাঁধের আওয়াজে ঘুরে দেখলো রনো। উঠে দাঁড়ালো। শ্রী কাঁদছিলো। রনো ওর কাছে এসে বললো – প্রিয়াঙ্কা দি কি বলছিলো ? তুমি চলে যাবে? কেন?
শ্রী – আপনি বাইরে যান। কেউ দেখলে ……………………………
রনো রেগে বললো – দেখুক। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও , কেন?
শ্রী চুপ করে রইলো।
রনো শ্রীর কাঁধ ধরে নাড়িয়ে বললো – কেন? কেন করছো এইরকম? তুমি আমাকে ভালোবাসো তবুও কেন এমন করছো ?
শ্রী- আপনার ভুল হচ্ছে আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।
রনো – শ্রী, প্লিজ এইসব বন্ধ করো। আর কি বললে আমাকে ভালোবাসোনা।
তাহলে আমার ফটো তোমার কাছে কেন? আমার কেশব নামটা তোমার মনের মধ্যে কেন? কেন ঘুমের ঘোরে তুমি আমার কেশব নাম ধরে ডাকো?
শ্রী- আপনি যান। আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ।
বাইরে থেকে অদিতি ডাকছে রনো, রনো? বাইরে আয়। প্রিয়াঙ্কা দি, জামাইবাবু যে কোনো মুহূর্তে এসে যাবে প্লিজ। পরে কথা বলবি।
রনো – আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো , আর এটা প্রমান করবো পৃথিবীর কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না শ্রী। আর তোমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবেনা তুমিও না। তুমি আমাকে চেনো না। রনো চলে গেলো।
—————————————————————————————————-
রনোরা চলে গেলো। রাহুল জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। রনো সব বললো -এমনকি প্রিয়াঙ্কার কথাটাও।
রাহুল- তার মানে ডাইরি হাতানো ছাড়া আর উপায় নেই।
রনো – হুম, জোগাড় কর।
রাহুল – আমি বেরোচ্ছি আচ্ছা সামনের দোকানে পাবো, না হলে হাসপাতাল যেতে হবে। একটা তো ক্লোরোফর্ম পাওয়া যাবে বল।
রনো – হুম।
অদিতি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল সবটা শুনেছে। কি?…………… রাহুল , রনো। প্লিজ নো। আমি কোনোমতে এইসব করতে দেব না। আমার দিব্বি রনো, রাহুল তোরা বাড়ি থেকে বেরোবি না।
অনেক করে বুঝিয়েও কিছু হলো না. রনো আর রাহুলের বাইকের চাবি নিয়ে রেখে দিয়েছে সাথেই দিব্যি দিয়েছে দুজনকে। তারা বাড়ি থেকে বের হবে না।
দুপুর মিটলো, রাত্রে খাওয়া মিটলো। কিন্তু একবার ও শ্রী সাথে আর দেখা হয়নি রনোর। আর এদিকে প্রিয়াঙ্কার মুখের ভাব একই আছে। রাহুল, অদিতি বাকি সবার সাথে স্বাভাবিক। শুধু রনোর সাথে কোনো কথা বলছে না।
অদিতিকে রাত্রে রনো কল করে বললো দরজা খোল , আমি একবার শ্রীর সাথে কথা বলবো।
অদিতি – এখন?
রনো – না, কাল সকালে সবার সামনে, দরজা খোল।
অদিতি দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু সন্দেহ যায়নি। রাহুল তোরা ক্লোরোফর্ম নিয়ে এসেছিস ?
রাহুল – আশ্চর্য, আমরা তো বাড়ি থেকে বের হয়নি। তুই বের হতে দিস নি দুজনকেই। কোথা থেকে ক্লোরোফর্ম আসবে ? আমি ম্যাজিক জানি যে হাত পাতবো আর ক্লোরোফর্মের বোতল এসে হাতে পড়বে বলে হাতটা অদিতির দিকে এগিয়ে দিলো।
রনো সেই সময় নিজের পকেট থেকে ক্লোরোফর্মের একটা ছোট বোতল রাহুলের হাতে রেখে দিলো। অদিতি চেঁচানোর আগেই রনো সরি বলে অদিতির মুখে রুমাল চেপে ধরলো। অদিতি রাহুলের গায়ে লুটিয়ে পড়লো।
রাহুল বোতলটা পকেটে রেখে দিয়ে অদিতিকে বললো- দেখ সরি, আমি চাইনি। কিন্তু রনোর জন্য।
রনো বললো- ও কিছু শুনতে পাচ্ছে না।
রাহুল – তুই যে কাজে এসেছিস যা না। আর এইসবের পরে যদি অদিতি ব্রেক আপ করে তোকে মেরে ফেলবো।
রনো – ব্রেক আপ করবে না। ডিভোর্স দেবে, তোদের রেজেস্ট্রি হয়ে গেছে। বলে চলে গেলো।
রাহুল অদিতিকে সরি, সরি বলে কোলে তুলে অদিতির ঘরের দিকে রওনা দিলো।
রনো শ্রীর ঘরের দরজায় এসে টোকা দিলো। শ্রী কে কে বললো। সাড়া দিলো না রনো। ফের টোকা দিলো। প্রিয়াঙ্কা দি এমন করে। শ্রী ভাবলো প্রিয়াঙ্কা। দরজা খুলে বারান্দার দিকে তাকাতেই পিছন থেকে রনো ওর মুখে রুমাল চেপে ধরলো। শ্রী রনোর গায়ে লুটিয়ে পড়লো। শ্রীকে জড়িয়ে ধরে ঘরে গেলো রনো। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে -বললো- কেন করছো শ্রী? আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সত্যিই বোঝো না।
শ্রীকে ডাকা দিয়ে ওর ব্যাগ থেকে আলমারির চাবি খুলে বাক্সটা বের করলো রনো। বাক্স নিয়ে আলমারিতে চাবি দিয়ে ঘুরতেই দেখলো দরজায় প্রিয়াঙ্কা দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়াঙ্কা – রাগ,ক্ষোভ, ঘৃণা সব মিশিয়ে জিজ্ঞাসা করলো – কি করছো তুমি এখন এখানে?
রাহুল এসে হাজির হয়েছে দরজায়। তাকে ইশারায় মানা করলো রনো।
প্রিয়াঙ্কা ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলো – কি করছো তুমি এখানে ?
আগের পর্ব – রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৯
পরের পর্ব – রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ১১