2019 এর লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা ব্যাপকহারে লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন দল থেকে নেতাকর্মীরা পর্যায়ক্রমে বিজেপিতে যোগদান করেন। তবে বেশ কিছুদিন যাবত দেখা যাচ্ছে, ট্রেন্ড পাল্টেছে। বর্তমানে বিজেপি থেকে প্রচুর নেতাকর্মীরা বেরিয়ে শাসক দল সহ অন্যান্য দলে আবার যোগ দিচ্ছেন। ক্রমাগত এই ঘটনার ফলে বিজেপি শিবিরে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ। এই দলবদল এর ফলে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুরসভা পঞ্চায়েত যেগুলো বিজেপির দখলীকৃত ছিল, সেগুলি একে একে হাতছাড়া হয়েছে। এদিন আবারও বিজেপি থেকে বড়সড় আকারে দলবদল করলো বেশ কিছু কর্মী।
গত লোকসভা নির্বাচনের পরে বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক মাটি শক্ত করে সামনে আসে বিজেপি। ফলস্বরূপ, লোকসভা নির্বাচনে 18 টি আসন জেতায় একের পর এক হেভিওয়েট নেতা থেকে শুরু করে কর্মীসমর্থকরা শাসক দল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে বিজেপিতে যোগদান করে। কিন্তু বর্তমানে সেই বাংলাতেই উল্টো ধাক্কা সইতে হচ্ছে বিজেপিকে। সম্প্রতি এনআরসি এবং সিএএ কে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। একের পর এক দখলীকৃত পুরসভা পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূলও লোকসভা ভোটে কোণঠাসা অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নিযুক্ত করে ভোট কৌঁশলী প্রশান্ত কিশোরকে এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী তৃণমূল ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হয়েছে। এই মুহূর্তে ঠিক এই অবস্থাতেই বিজেপিতে আবারও একটি বড় ধাক্কা।
সূত্রের খবর, উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি এলাকা থেকে প্রায় 2 হাজার বিজেপি নেতা কর্মী সমর্থক যোগ দিলেন তৃণমূলে। আরো জানা গেছে, এই দুই হাজার বিজেপি নেতা কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর 24 পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে এদিন তৃণমূলে প্রবেশ করে। জানা গিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দলবদলকারী প্রত্যেক নেতা-কর্মীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই দলবদলকারীর মধ্যে রয়েছেন সন্দেশখালি বিধানসভার মনিপুর অঞ্চলের বিজেপি মন্ডল সভাপতি অসীম মন্ডল।
দেশে যে কোনো দিন ব্যান হয়ে যেতে পারে হোয়াটস্যাপ। তাই এখন থেকে আমরা শুধুমাত্র টেলিগ্রাম ও সিগন্যাল অ্যাপে। প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার নিউজ নিয়মিতভাবে পেতে যোগ দিন –
টেলিগ্রাম গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
সিগন্যাল গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
জানা গেছে, দলবদল এর ফলে তৃণমূলে প্রবেশ করেই দলবদলকারীরা পুরনো দল বিজেপির প্রতি তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকেই একই অভিযোগ জানাচ্ছেন। যেভাবে জোর করে সারাদেশে নাগরিকত্ব আইন চাপাতে চাইছে বিজেপি, তাতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আর সেই কারণেই এদিন দলবদল এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্য অন্যদিক থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছেন, লোকসভা ভোটের পর ভুল বুঝিয়ে বিজেপি তাঁদের কর্মীদেরকে দল ছাড়া করেছিল।
তবে বর্তমানে সারা দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তারই প্রভাব পড়েছে এদিন দলবদল কারীদের মধ্যে। যেভাবে জোর করে এই আইন লাগু করার কথা চলছে, তাতে ক্ষুব্ধ তাঁরা। সেই কারণেই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলবদলকারীরা। অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব আরও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করে চলেছেন তা দেখেই তৃণমূলের আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন দলবদলকারীরা।
তবে, লোকসভা ভোটের বেশ কিছুদিন পর থেকেই প্রতিনিয়ত দলবদল এর ঘটনা বিজেপি শিবিরকে যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছে। ইতিমধ্যে এই নিয়ে বিজেপি শিবিরে তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে একে একে যেভাবে বিজেপি থেকে নেতাকর্মীরা দলবদল করছেন, তাতে আগামী দিনে এ রাজ্যে বিজেপি যথেষ্ট বেকায়দায় পড়তে পারে। তাই রাজ্য বিজেপির উচিত এই সমস্যার সত্ত্বর সমাধান করা। আবার, রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ বিজেপি সদস্য গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা যদি সত্যি হয় তাহলে বিজেপি শিবিরে সত্যিই ধ্বস নামলো। আপাতত পুরো ব্যাপারটিই নজর রেখেছে ওয়াকিবহাল মহল।