বর্তমান সময়ে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন সম্পর্ক হয়েছে যে, সুযোগ পেলেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পসরা সাজিয়ে বসে পড়ে। এক্ষেত্রে যদি কোনো দল কোনো দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের সুযোগ পায়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আর ঠিক এমনটাই হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত সরস্বতী পুজোর দিন কালিয়াগঞ্জের বরুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সবজির বাগান থেকে পেঁয়াজ চুরি করার অভিযোগে এক বৃদ্ধাকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে মারধর করার অভিযোগ উঠে। পরে সালিশি সভা করে তার 14 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর পরদিন ওই বৃদ্ধার ঘর থেকে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
সম্প্রতি এই ব্যাপারে সেই বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগ তোলেন তাঁর ছেলে ফালু মন্ডল। এদিকে এই ঘটনায় প্রথম থেকেই অভিযোগের আঙুল উঠতে শুরু করে বরুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির উপপ্রধান ননীগোপাল মন্ডলের বিরুদ্ধে। আর এমন একটা তরতাজা ইস্যুকে হাতে পেয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হতে সুযোগ ছেড়ে দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথম থেকেই সেই বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল তারা। তবে এখনও পর্যন্ত সেই অভিযুক্ত বিজেপি নেতা গ্রেপ্তার না হওয়ায়, এবার উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেল কালিয়াগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তপন দেব সিংহকে। আর শাসক দলের বিধায়ক পুলিশ প্রশাসনের ওপর উষ্মা প্রকাশ করায়, এখন নানা মহলে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন।
ফেসবুকে আমাদের নতুন ঠিকানা, লেটেস্ট আপডেট পেতে আজই লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
এদিন এই প্রসঙ্গে কালিয়াগঞ্জ তৃণমূল বিধায়ক তপন দেব সিংহ বলেন, “বর্তমানে অধিবেশন চলার কারণে আমি কলকাতায় রয়েছি। আগামীকাল জেলায় ফিরব। এখনও পর্যন্ত বিজেপির উপপ্রধানকে গ্রেফতার করা হল না কেন, তা জানতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করব। সালিশি সভার পর ওই মহিলার মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় আমরা এলাকায় ইতিমধ্যেই মিছিল করেছি। যদি অভিযুক্তদের গ্রেফতার না হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।” আর তৃণমূলের বিধায়ক পুলিশ প্রশাসনের ওপর এই কথা বলে ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন বলে পাল্টা দাবি করছে সমালোচক মহলের একাংশ।
অনেকে বলছেন, রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী স্বয়ং তৃণমূলের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে বিরোধীরা একটু অপরাধ করলেই, যখন পুলিশ তাদের শ্রীঘরে নিয়ে যায়, তখন বিজেপির উপপ্রধান এই ঘটনায় দোষী হওয়া সত্ত্বেও, কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না! তাহলে কি পুলিশ প্রশাসন বুঝতে পেরেছে যে, এই ঘটনায় বিজেপি প্রকৃত দোষী নয়! এখন এই সমস্ত প্রশ্ন তুলে পাল্টা তৃণমূলকে কটাক্ষ করছে বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহল।
এদিন এই ব্যাপারে উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির সভাপতি বিশ্বজিত লাহিড়ী বলেন, “আমাদের বরুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ননীগোপাল মন্ডলকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত কালিয়াগঞ্জ থানা ঘেরাও করব। কেন এই ধরনের ষড়যন্ত্র করে আমাদের দলের একজন নিষ্ঠাবান কর্মীকে হেনস্থা করা হচ্ছে, তার জবাব পুলিশ প্রশাসনকে দিতে হবে।” সব মিলিয়ে এবার কালিয়াগঞ্জের ঘটনা নিয়ে শাসক থেকে বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের চাপের মুখেই যে পড়তে চলেছে পুলিশ প্রশাসন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত প্রায় সকলেই।