
ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের যে তিনটি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে এসেছে, তাতে দেখা গেছে, একদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যেমন হ্যাটট্রিক করেছে, তেমনই কার্যত হোয়াইট ওয়াশ হয়ে গেছে বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু সামান্য কয়েক মাস আগে যে ভারতীয় জনতা পার্টি 42 এ 42 আসন জেতার স্বপ্ন দেখা তৃণমূল কংগ্রেসকে 34 থেকে একেবারে 22 এ নামিয়ে দিয়েছিল এবং নিজেদের আসন 2 থেকে 18 তে পৌছে দিয়েছিল, কয়েক মাস ঘুরতে ঘুরতেই সেই ভারতীয় জনতা পার্টি কি করে নিজেদের এগিয়ে থাকা আসনে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেল!
তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশেষজ্ঞদের মনে। এক্ষেত্রে তৃণমূলের এই অভূতপূর্ব জয়ের শিরোপা অনেকেই নির্বাচনী রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোরকে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে কার্যত তৃণমূলত্যাগী জোড়া ফুল শিবিরের এক সময়কার সেকেন্ড ইন কমান্ড পরিচিত মুকুল রায়ের নীতির জোরে সফলতার মুখ দেখেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কাজেই পশ্চিমবঙ্গে একসময় টিমটিম করে জ্বলতে থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি একলাফে নিজেদের কলেবর অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলতে পেরেছিল।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের হাল ফেরাতে রণনীতি হিসেবে নিয়োগ করেন প্রশান্ত কিশোরকে। এর আগে বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে নিজের রাজনৈতিক বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কাজেই বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসকে সহযোগিতা করতে এসে প্রশান্ত কিশোর বেশকিছু কর্মসূচির মধ্যে বেঁধে দিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। প্রথমদিকে দলের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রশান্ত কিশোরের বিচক্ষণতার উপরে প্রশ্নচিহ্ন উঠলেও, এবারের বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে প্রশান্ত কিশোর কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছেন।
ফেসবুকে আমাদের নতুন ঠিকানা, লেটেস্ট আপডেট পেতে আজই লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
উপনির্বাচনের ফলাফলই প্রমান করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার উপরে দলের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়ে কোনো রকম ভুল করেননি। উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস হ্যাটট্রিক করার পরেই লক্ষ করা গেছে, প্রশান্তবাবুর নীতিতে কার্যত কিস্তিমাত খেয়ে গেছে বঙ্গ বিজেপির চাণক্য নামে পরিচিত মুকুল রায়। তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়লাভ করানোর জন্য মূলত তিনটি মন্ত্রের প্রয়োগ করেছিল টিম পিকে। পয়লা নম্বর, দিদিকে বলো কর্মসূচি। যার মাধ্যমে এমপি থেকে শুরু করে এমএলএ, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সদস্য, তৃণমূল নেতা এবং সমস্ত জনপ্রতিনিধিদেরকে একেবারে জনতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়ে তাদের অভাব-অভিযোগ বুঝে নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন পিকে।
যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিল তিল করে বাড়তে থাকা রাজ্যের শাসকদলের প্রতি মানুষের ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হয়। দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে, বুথভিত্তিক সংগঠন। ক্ষমতায় বসার পরেই কার্যত হাওয়ার উপর এই তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন চলছিল। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরে কোনো নেতারাই বুথের সংগঠনের দিকে মনোযোগী হচ্ছিলেন না। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদেরকে বুথের, সংগঠন সাজাতে নির্দেশ দেন। তৃতীয় নম্বর, এনআরসি বিরোধী প্রচার।
পশ্চিমবঙ্গে যেখানে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা শরণার্থীদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি, অনেক নাগরিকের কাছেই জমি জায়গা থেকে শুরু করে কোনো পুরাতন দলিল-দস্তাবেজ নেই, সেখানে এনআরসির ভয়াবহতা মানুষের মধ্যে প্রচারের মাধ্যমে বিজেপির প্রতি তাদের মোহভঙ্গ করাতে নির্দেশ দেন প্রশান্ত কিশোর। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশান্ত কিশোরের এই তিনটি মন্ত্র একেবারে মহাঔষধের মত কাজ করেছে তৃণমূলের ক্ষেত্রে।
তাই তৃণমূলের এই অভূতপূর্ব বিজয় এবং ভারতীয় জনতা পার্টির অপ্রত্যাশিত পরাজয় যে সম্পূর্ণরূপে প্রশান্ত কিশোরের 2021 সালের ট্রেলার, তা বুঝতে বাকি নেই বিশেষজ্ঞদের। তবে 2021 সালে আসতে এখনও বছরখানেক। ফলে এই সময়ের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি বিকল্প কোনো বুদ্ধির মাধ্যমে প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তাকে মাত দিতে পারে, নাকি যে দায়িত্ব মমতা বন্দোপাধ্যায় টিম পিকেকে অর্পণ করেছেন, সেই দায়িত্ব সফলভাবে প্রতিপালন করতে পারে প্রশান্ত কিশোর! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।