
জল্পনা বাড়িয়ে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতেই চিটফান্ড কান্ড নিয়ে বড়সড় পদক্ষেপ নিতে শুরু করল সিবিআই বলে তীব্র জল্পনা ছড়াল রাজনৈতিক মহলে। সূত্রের খবর, দিনকয়েক আগে সিবিআই কর্তারা যোগাযোগ করে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে। সারদা ছাড়া অন্য কোন কোন চিটফান্ড সংস্থার মামলা বর্তমানে তাঁদের হাতে রয়েছে সে তথ্য বিস্তারিতভাবে জানতে চাওয়া হয়।
কোন থানার অধীনে কত কেস রয়েছে সে ব্যাপার জানতেও উদ্যোগী হয় সিবিআাই বলে জানা গেছে। রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে মোট ৪৬৪ টি কেস রয়েছে। বিভিন্ন জেলায় এক-একটি চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
সমস্ত অভিযোগ একত্রিত করে একটি ‘মাস্টার কেস’ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই, দিন কয়েক আগে ১২৫ টি ফাইল সিবিআইয়ের হাত তুলে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। বাকিগুলো শীঘ্রই সিবিআই নিজেদের অধীনে নিয়ে নেবে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংস্থা।
তবে এতদিন পর হঠাৎ করে চিটফান্ড কান্ড নিয়ে সিবিআইয়ের অতি তৎপরতা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। লোকসভা ভোটকে টার্গেট করেই এই ইস্যুতে নড়েচড়ে বসেছে কি সিবিআই? ক্রমশ বাড়ছে সেই জল্পনা। এই চিটফান্ড কান্ডের সূত্র ধরেই কি লোকসভা ভোটের আগে অনেক রাজনৈতিক নেতার ‘প্রকৃত স্বরূপ’ তুলে ধরা হবে? আর, সেই লক্ষ্যেই কি সিবিআইয়ের এই অতি-সক্রিয়তা? জল্পনাটা ক্রমশ দানা বাঁধছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলে।
প্রসঙ্গত, সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর একাধিক চিটফান্ড কান্ডে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে একাধিক চিটফান্ড কোম্পানির ঝাঁপ রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়। জেলায় জেলায় বিভিন্ন থানায় প্রতারিত আমানতকারীরা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করেন। আর এরপরেই, প্রথমে সিআইডি এবং পরে রাজ্য সরকারের সিট এনিয়ে তদন্ত শুরু করে।
ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না। তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে
এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে
তদন্তের সূত্র ধরে জানা যায়, সারদা-রোজভ্যালি বিভিন্ন স্কিম খুলে বাজার থেকে বহু হিসাব বহির্ভূত টাকা তুলেছে। যদিও, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেই টাকা ফেরত পাননি প্রতারিতরা। শুধু তাই নয়, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া যায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ময়দানে নামে সিবিআই। তদন্তভার হাতে পেয়েই, প্রথমে সারদা এবং রোজভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। যদিও বিগত পাঁচ বছর ধরে চললেও সেই তদন্তের এখনো ইতি হয়নি – যে কারণে জমা পড়েনি চার্জশিটও! রোজভ্যালির ক্ষেত্রেও তদন্তের গতি-প্রকৃতি একইরকম পথে চালিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো রাজ্যের সবকটি চিটফান্ড কান্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের দেখার কথা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে – মাঝখানে যেন সেই তদন্তের গতিতে ভাটার টান ছিল! যা নিয়ে ফিসফাস কম হয় নি – তবে, কর্মীর অভাবে এতদিন সবগুলোর তদন্ত নিয়ে মাথা ঘামাতে পৰ যায় নি – এমনটাই নিজেদের যুক্তিতে জানিয়েছিল সিবিআই। তাছাড়া, রোজভ্যালি এবং সারদার কেস মিটলেই বাকিগুলোতে হাত দেওয়া হবে – এমনটাও জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে।
যদিও রাজ্য সরকারের দাবী, এগুলিরই তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে বারেবারে দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও, সে ব্যাপারে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি সিবিআইয়ের। এখন লোকসভা ভোটের আগে কেসগুলো নেওয়ার জন্যে তৎপরতা শুরু করেছে সিবিআই। ফলে, সিবিআইয়ের এধরণের তৎপরতায় সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, যেসব সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে, তাদের অফিসে শীঘ্রই তদন্ত শুরু করা হবে। রাজ্য পুলিশের তদন্তের রিপোর্ট ফের খতিয়ে দেখা হবে এবং তাতে যদি কোনো রাজনৈতিক নেতার নাম জু্ড়ে থাকে, তাহলে তাঁদের কড়া জেরার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।