
দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার প্রথম পর্বেই পরিষ্কার হয়ে যায়, দিল্লির মসনদ দখল করতে চলেছে আম আদমি পার্টি। অর্থাৎ বুথ ফেরত সমীক্ষার ছবি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো এদিন। অন্যদিকে, ফল ঘোষণার আগে থেকেই বিজেপি রীতিমতো আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল। দিল্লিতে বিজেপি 48 টা আসন পাবে ধরেই নিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বিজেপির আত্মবিশ্বাসের মহল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির কাছে ছিল একটা প্রেস্টিজ ফাইট। এই ফাইট হেরে গিয়ে অবশ্যই কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের কাছে একটা বড় ধাক্কা।
অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি ঠিক বিপরীত ফল করেছিল। তবে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সব আশায় জল ঢেলে রীতিমতো সমস্ত হিসেব-নিকেশ উল্টোপাল্টা করে দিয়ে আম আদমি পার্টি দিল্লির মসনদের দিকে এগিয়ে গেল। এদিকে বিজেপি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে লজ্জাজনক হার থেকে কোন রকমে বেঁচে মুখরক্ষা করেছে। গোটা দিল্লি শহর জুড়ে বিজেপির ঝুলিতে মাত্র 8 টি আসন। অন্যদিকে, ভোট গণনার প্রথম পর্বেই দিল্লির নির্বাচনী ফলাফল কার্যত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এদিন ফলাফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলের অনেকেই 2024 এ লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদের পরবর্তী দাবিদার খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করছেন।
অন্যদিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিজেপির বিরুদ্ধে সেই সময়ে লড়ে প্রায় নিরঙ্কুশভাবে জিতলেন, যে সময় বিজেপি সর্ববৃহৎ শক্তি নিয়ে দেশের মধ্যে এগিয়ে আছে। তাই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জেতার ফলে অন্যান্য অবিজেপি রাজ্যগুলিতে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। বিজেপি বিরোধিতায় বলা হচ্ছে, আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নতুন দাবিদার হলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সূত্রের খবর, দিল্লির রাস্তাতেও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পার্টি জেতার পর ঘুরছে নতুন পোস্টার, যেখানে লেখা রয়েছে 2024 মোদী ভার্সেস কেজরিওয়াল।
ফেসবুকে আমাদের নতুন ঠিকানা, লেটেস্ট আপডেট পেতে আজই লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আপ প্রার্থীদের জয় সম্পূর্ণ অন্য সমীকরণ তৈরি করল। এবারের দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে উন্নয়ন বনাম মেরুকরণের ওপর ভিত্তি করে। আপ সরকার যখন সাফল্যের কথা তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন, তখন বিজেপি সম্পূর্ণ ধর্মীয় মেরুকরণ এর পথে হেঁটেছেন বলে জানা গেছে। এমনকি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে আবেদন করে গেছিলেন দিল্লির জনগণের কাছে,শাহীনবাগের আন্দোলনকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য। কিন্তু মঙ্গলবার এর ফলাফল থেকে স্পষ্ট বিজেপি নেতৃত্বের পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল কিছুটা স্পষ্ট হতেই একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসতে থাকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে। এবং সর্বোপরি এই জয়ের পেছনে আরেকজনের যে অবদান রয়েছে তাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির নির্বাচনী স্ট্যাটেজিষ্ট হিসেবে কাজ করেছেন বহুল পরিচিত প্রশান্ত কিশোর। সূত্রের খবর, প্রশান্ত কিশোরের কৌশল অবলম্বন করে দিল্লির নাগরিকদের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যার ফল হাতেনাতে মিলেছে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর। টুইট করে প্রশান্ত কিশোর এদিন দিল্লি নাগরিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, ‘ভারতের আত্মা’কে সুরক্ষিত রাখতে সাহস দেখানোর জন্য দিল্লিকে ধন্যবাদ’।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, দিল্লি বিধানসভা ভোটের এক্সিট পোলেই বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। তাঁদের মেরুকরণের রাজনীতি দিল্লিবাসীদের বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করতে পারেনি তা এক্সিট পোলেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বরা এক্সিট পোলের সিদ্ধান্তকে একেবারে অস্বীকার করেন। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, শাহীনবাগ নিয়ে কেজরিওয়ালের নীরবতায় বিজেপির মূল অস্ত্র ভোঁতা করে দিয়েছে। আপাতত, দিল্লি শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে গোটা দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়ার মোড় কোন দিকে ঘোরে, সেদিকে আপাতত লক্ষ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।