
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত জয় ধরা দিয়েছে আম আদমি পার্টির কাছে। আর তাতেই মনে করা হচ্ছে সারাদেশে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন নতুন উদ্যমে শুরু হলো। বিজেপির বিরুদ্ধে এবার আক্রমণ শানাচ্ছেন দেশের প্রায় সমস্ত বিরোধী নেতারা। সেই লড়াইয়ে কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে চাননা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরে কর্মীসভার মঞ্চ থেকে তিনি কেজরিওয়ালের জেতার খবরকে কেন্দ্র করে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন এবং রীতিমতো হুঁশিয়ার করলেন তৃণমূল নেত্রী একুশের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে।
ইতিমধ্যে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে বিজেপি দিল্লিতে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেছে। বিকেল চারটে অব্দি দেখা গেছে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি 63 টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, মাত্র সাতটি আসনে এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি তথা বিজেপি। আর এই ফলাফলের পরেই বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নতুন ভাবে আক্রমন করতে শুরু করেছে। এদিন বাঁকুড়ার কর্মীসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির শিবিরের বিরুদ্ধে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবাংলায় বিজেপির ভরাডুবি হবে।
বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়ে এদিন সভা ডেকেছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটে এই জেলার দুটি আসনেই হারতে হয়েছে তৃণমূলকে বিজেপির কাছে। বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর আসন দখল করে নিয়েছে বিজেপি। আর তারপরেই বাঁকুড়ার সাংগঠনিক দায়িত্ব বদল করে সারা পশ্চিমাঞ্চলের ভার মুখ্যমন্ত্রী তুলে দেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাতে। এদিনের কর্মীসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দিকে আক্রমণের নিশানা রেখে বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পর 8 মাস কাটতে না কাটতেই বিজেপির হাত থেকে একাধিক রাজ্য হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম করে করে রাজ্যের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র কর্নাটক এবং উত্তরপ্রদেশেই বিজেপি সরকার রয়েছে। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র, ঝারখণ্ড এবং দিল্লিতে রীতিমতো ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে বিজেপি শিবিরের দুর্গ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, আগামী 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবাংলায় বিজেপির শেষ তরীটিও ডুবিয়ে দেবে বাংলা। বিজেপি শিবিরের প্রতি তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী এদিন। তিনি বলেন, ‘যত জায়গায় নির্বাচন হয়েছে, সব জায়গায় ধপাস ধুম।’
দেশে যে কোনো দিন ব্যান হয়ে যেতে পারে হোয়াটস্যাপ। তাই এখন থেকে আমরা শুধুমাত্র টেলিগ্রাম ও সিগন্যাল অ্যাপে। প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার নিউজ নিয়মিতভাবে পেতে যোগ দিন –
টেলিগ্রাম গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
সিগন্যাল গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় প্রচারপর্বে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যতদিন আমি বাঁচব, যতদিন তৃণমূল থাকবে ততদিন সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে।’ অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জয়ের খবর জানার পরেই তিনি তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এরপরই তিনি বিজেপির আশঙ্কা বাড়িয়ে একটি প্রসঙ্গ উস্কে দেন। তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পর মাত্র 8 মাসের মাথায় একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বিজেপির। এখন শুধুমাত্র বিজেপির ঝুলিতে রয়েছে উত্তর প্রদেশ এবং কর্ণাটক।
এরসাথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তাঁর রাজ্যের উন্নয়নের কথা বলেন। সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সরকারিভাবে জন্মের পরে পরেই প্রত্যেককে সবুজশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং কেউ মারা গেলে সমব্যাথী প্রকল্পে নিযুক্ত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে কন্যাশ্রী নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবাংলার প্রত্যেকটি মেয়েই এখন কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত।
এই মুহূর্তে দিল্লিতে বিজেপি হারের পর অন্যান্য বিরোধী দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে নতুন করে মুখ খুলেছে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির গড় যেভাবে ধুলিস্যাৎ হলো, তাতে আগামী দিনে অন্যান্য রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলির প্রতিবাদ যে জোরালো হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের পর যেভাবে বিজেপি রাজনৈতিক মঞ্চের একেবারে সামনের সারিতে চলে এসেছিল, বিগত কয়েক মাসের ব্যবধানে বিজেপি যথেষ্ট কোণঠাসা বাংলায়। আপাতত পরিস্থিতি কি হতে চলেছে আগামী দিনে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ।