
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে বাংলায় অনেকটাই বেগ পেতে হয়েছে। 2014 তারা 34 টা আসন পেলেও 2019-এ এসে তৃণমূলের আসন সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে 22 টিতে। অপরদিকে বিজেপি বাংলা থেকে 18 টা আসন নিজেদের দখলে রেখেছে। যার পরে আগামী 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে এবং আরও একবার রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে দলের সকলকে জনসংযোগে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বস্তুত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের প্রায় কোনো জেলাতেই খাতা খুলতে পারেনি তৃণমূল। তবে সেই উত্তরবঙ্গে ভিত শক্ত করতেই বৃহস্পতিবার কোচবিহারের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষ রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিলেন শাসকদলের অন্যতম শীর্ষনেতা সুব্রত বক্সি। উত্তরবঙ্গের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সুব্রতবাবু এদিন একাধিক ‘ভোকাল টনিক’ দেন বলে ঘাসফুল শিবির সূত্রে খবর।
সূত্রের খবর, এদিনের এই সম্মেলনে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিনয় কৃষ্ণ বর্মন, হিতেন বর্মন, মিহির গোস্বামী, উদয়ন গুহ সহ জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা তাদের বক্তব্য রাখেন। আর তারপরেই সব শেষে বক্তব্য রাখতে ওঠেন রাজ্য তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সি। আর নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বর্তমান সময়ের কথা কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন। ভবিষ্যতে কিভাবে দলকে চলতে হবে সেই সম্পর্কেও নিজের মতের ব্যাখ্যা করেন সুব্রতবাবু।
দলের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “যাদের আচার-আচরণ, ঔদ্ধত্য দেখলে মানুষ কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়, তাদের কিছুটা দূরে রেখে যাঁরা পদ, টিকিট চান না তাঁদের সঙ্ঘবদ্ধ করুন। কেউ কেউ ভাবছেন আমাদের তো বন্ধ করে দিয়েছে, বাতিল করে দিয়েছে, আমি বলছি, এটা ভাববার কোনো কারণ নেই। সাংগঠনিকভাবে দলকে একই সূত্রে বাঁধার জন্য রাজনৈতিকভাবে বহু জেলাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
সুব্রতবাবু আরও বলেন, “সবাইকে সঙ্ঘবদ্ধ করে চলুন। আচার-আচরণ, ঔদ্ধত্যের পরিবর্তন করুন। অতীতের মতো মানুষের কাছে ফিরে যান। যদি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আর কর্মকাণ্ড থাকে, তাহলে আবার ফিরবেন।” অন্যদিকে এদিনের এই কর্মী সম্মেলন থেকে দলের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যেও কড়া বার্তা দেন সুব্রত বক্সি। কাজ না হওয়া নিয়ে নিজের তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
ফেসবুকের কিছু টেকনিক্যাল প্রবলেমের জন্য সব আপডেট আপনাদের কাছে সবসময় পৌঁচ্ছাছে না। তাই আমাদের সমস্ত খবরের নিয়মিত আপডেট পেতে যোগদিন আমাদের হোয়াটস্যাপ বা টেলিগ্রাম গ্রূপে। ১. আমাদের Telegram গ্রূপ – ক্লিক করুন প্রিয় বন্ধু মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের নোটিফিকেশন আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের ব্রাউসারে সাথে সাথে পেতে, উপরের পপ-আপে অথবা নীচের বেল আইকনে ক্লিক করে ‘Allow‘ করুন।
২. আমাদের WhatsApp গ্রূপ – ক্লিক করুন
৩. আমাদের Facebook গ্রূপ – ক্লিক করুন
৪. আমাদের Twitter গ্রূপ – ক্লিক করুন
৫. আমাদের YouTube চ্যানেল – ক্লিক করুন
পঞ্চায়েত সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনাকে ধাক্কা দিক, দুটো গালি দিক আপনি পঞ্চায়েত অফিসে পৌঁছান। আলোচনা করে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সহযোগিতার জন্য জেলায় কোর কমিটির সঙ্গে আলোচনা করুন।” তবে তৃণমূলের যেভাবে কোচবিহার জেলা সহ অনেক জেলাতেই পুরনো বনাম নতুন নেতাকর্মীদের নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, তাতে দলের অস্বস্তি দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিন এই প্রসঙ্গেও কর্মী সম্মেলনে মুখ খোলেন সুব্রত বক্সি। তিনি বলেন, “প্রথম দিন থেকে আমি আছি, তাই আমি ভালো, আর যাঁরা পরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাই তাঁরা খারাপ, এমনটা ভাববেন না। যাঁরা প্রথম দিন থেকে আছেন, তাঁদের মধ্যেও কিছু খারাপ মানুষ আছে, আর যাঁরা পরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও কিছু ভালো মানুষ আছে। তাই সমন্বয় করে সকলকে একসাথে চলতে হবে।” অন্যদিকে এদিনের এই কর্মী সম্মেলন থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি।
তিনি বলেন, “দিল্লিতে বসে একটা দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রাম ধ্বংস করে দেবে, ভারতবর্ষের গণতন্ত্রে এসব চলে না। যে কায়দায় আপনারা অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন, মানুষের কাছে গিয়েছেন, সেই কায়দায় যদি ফিরতে পারেন, তাহলেই সাফল্য আমরা ধরে রাখতে পারব। শুধু পেশী, অর্থ, সংবাদমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে যদি ক্ষমতায় আসা যেত, তাহলে অর্থবান অনেক মানুষ না ঘুরেই নেতা-মন্ত্রী হয়ে যেত।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, একদিকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমানো আর অপরদিকে দলকে জনসংযোগে পাঠানোর বার্তাই এদিনের কর্মী সম্মেলন থেকে দিতে চাইলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। কিন্তু প্রায় প্রতিটা সভাতেই সুব্রত বক্সি এইভাবে দলের কর্মীদের সচেতন হওয়ার কথা বললেও তা যে হয়নি, তা লোকসভা ভোটের ফলাফলেই প্রমাণ হয়েছে। ফলে এবার কোচবিহার জেলায় সুব্রতবাবু দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নানা টনিক দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কতটা কার্যকরী হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।