
করোনার দাপটে কার্যত দিশেহারা গোটা বিশ্ব। আর তার মারণ খাবার কেবল থেকে বাঁচে নি বাংলাও। এই মারণ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত না বেরোনোয়, করোনা মহামারীর হাতে কার্যত দিশেহারা হয়ে গেছে সবাই। আর তার মাঝেই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত বাংলার বুকে আছড়ে পড়ল ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফান। এই ঝড়ের দাপটে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ।
ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের তান্ডবে পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলী ও পূর্ব বর্ধমানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলে গেছে বহু প্রাণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালই জানিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। উপরে গেছে গাছ থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক পোস্ট, মোবাইলের টাওয়ার। কিভাবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাংলা ঘুরে দাঁড়াবে তাই নিয়েই সকলে ভাবিত।
এই পরিস্থিতিতে সকাল থেকেই হঠাৎ গুঞ্জন ছড়িয়ে পরে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনো কথা বলছেন না কেন? স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সাংবাদিক বৈঠক থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলায় এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানান। আর তারপরেই, গতকাল রাত্রেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয় আজ বাংলায় পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসছেন নরেন্দ্র মোদী।
দেশে যে কোনো দিন ব্যান হয়ে যেতে পারে হোয়াটস্যাপ। তাই এখন থেকে আমরা শুধুমাত্র টেলিগ্রাম ও সিগন্যাল অ্যাপে। প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার নিউজ নিয়মিতভাবে পেতে যোগ দিন –
টেলিগ্রাম গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
সিগন্যাল গ্রূপ – টাচ করুন এখানে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের জেরে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দিল কেন্দ্রের শাসকদল। বাংলার বিপর্যয় খতিয়ে দেখতে কোনো প্রধানমন্ত্রী নিজে আসছেন – এই ঘটনা প্রথমবারের জন্য ঘটছে। ফলে, যে প্রচার গতকাল থেকে শুরু হয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপি বাংলাকে নজর দেয় না, তা সমূলে কার্যত ভোঁতা হয়ে গেল। উল্টে, কেন্দ্র সরকার যে বাংলাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই পাল্টা প্রচারের বড়সড় অস্ত্র পেয়ে যাবে ভারতীয় জনতা পার্টি।
তাছাড়া, আজ করোনা আবহে আবারো মোদী-বিরোধী মহাবৈঠকের কথা ছিল। সেখানে লোকসভা নির্বাচনের পূর্বের মত আবারো বিরোধী দলগুলি এক ছাতার তলায় আসার প্রক্রিয়া শুরু করত। বলাই বাহুল্য সেই বৈঠকের মধ্যমনি হয়ে উঠতেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের ফলে, সেই বৈঠকে যোগদান কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। কেননা, প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা পরিদর্শনে সফরসঙ্গী হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সকলেই বলছেন – করোনা ও আমফানের জোড়া ফলায় বিধ্বস্ত বাংলা। এই অবস্থায় রাজনীতি নয়, মানবিকতা দিয়েই পুরো ব্যাপারটা দেখা উচিত। কিন্তু আর এক বছরের মধ্যে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন – ফলে, এখন সবকিছুর মধ্যেই সূক্ষ রাজনীতি থাকবেই। যেমন, ইতিমধ্যেই ‘বাংলার গর্ব মমতা’ পেজ থেকে কিভাবে তৃণমূল নেত্রী আমফানের সময় বুক দিয়ে বাংলাকে আগলে রেখেছেন তার তুমুল প্রচার চলছে। আর তাই, এইসময় প্রধানমন্ত্রীর এই বঙ্গসফর কার্যত মাস্টারস্ট্রোক বলেই মনে করা হচ্ছে।
আর তাই, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে যেমন বড়সড় প্রচারের ‘অস্ত্র’ পাচ্ছে গেরুয়া শিবির, তেমনই তা তৃণমূল শিবিরের কাছে কার্যত জোড়া ধাক্কা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে চলেছে করোনা ও আমফান। ফলে, এই সময়ে সকল রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমই সাধারণ মানুষ অত্যন্ত মন দিয়ে বিশ্লেষণ করবেন। আর তার প্রতিফলন ঘটবে ভোটবাক্সে। এখন দেখার – এই রাজনৈতিক যুদ্ধে শেষ হাসি হাসে কে।