
বকেয়া ডিএ ও কেন্দ্রীয়হারে বেতন না পাওয়ায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে অবশেষে মামলা করেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ১৯৫৪ সালের একটি মামলার রায় দেখিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত স্পষ্ট জানিয়ে দেন ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পরে না। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাকারীদের পক্ষের দুই আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও সর্দার আমজাদ আলিকে নিজের নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন মাননীয় বিচারপতিরা।
এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে
গত ১৭ ই জুলাই বিকাশবাবু নিজের সওয়ালে জানান, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল যা বলেছেন তা এককথায় ‘ডেঞ্জারাস সাবমিসন’ – এর পরে যুক্তি দিয়ে তিনি দেখান রাজ্য সরকার স্বয়ং আইন করে জানিয়েছিল যে ডিএ কর্মীদের বেতনের অংশ, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তো কর্মীদের অধিকারের মধ্যে পরে। রাজ্য সরকারের নিজস্ব আইন যখন বলছে ডিএ অধিকার, তখন কিশোরবাবু কি করে আবার বলেন ডিএ আদতে দয়ার দান? এরপর সময়াভাবে বিকাশবাবু তাঁর বাকি বক্তব্য আদালতের সামনে রাখতে পারেননি।
আদালত আজ আবার বিকাশবাবুর বক্তব্য শোনে। সেখানে বিকাশবাবু জানান, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ১৯৫৪ সালের যে সুপ্রিম কোর্টের মামলার রায়ের কথা বলছেন তা আদতে একটি মামলার রায়ের অংশ বিশেষ। এরপরে ডিএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেই যে বিভিন্ন মামলার রায় বেরিয়েছে তা একে একে তুলে ধরে তিনি জানান, প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ডিএ কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পরে এবং এই ডিএ প্রাইসিং ইনডেক্স অনুযায়ী (সেটা কেন্দ্রের ইনডেক্স ফলো করেও হতে পারে বা রাজ্যের নিজস্ব ইনডেক্সও হতে পারে) দেওয়া হয়। বছরে দুবার করে ডিএ পাওয়াও অধিকারের মধ্যেই পরে ওই সব রায় অনুযায়ী।
এরপরে বিকাশবাবু আরো জানান, একই পদে বাংলায় কর্মরত ও দিল্লি বা চেন্নাইয়ের বঙ্গভবনের কর্মরত কর্মীর মধ্যে বেতনের ফারাক আছে। কেননা দিল্লি বা চেন্নাইয়ের কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পান। এখন যেহেতু ডিএ বেতনের অংশ এবং নিয়মানুযায়ী বেতন কখনো কমানো যায় না, তাই কোনো কারণে সেই কর্মী বদলি হয়ে বাংলায় ফিরে এলেও তিনি সেই কেন্দ্রীয়হারেই ডিএ পাবেন। অর্থাৎ, তখন একই পদে একই জায়গায় কাজ করা দুই কর্মীর বেতন বৈষম্য হবে – যা একটি স্বাধীন দেশে ভাবাই যায় না! এক্ষেত্রে যদি, দিল্লি বা চেন্নাইয়ের কর্মীরা ‘আউট স্টেশন এলাউন্স’ পেতেন তাহলে কিছু বলার ছিল না – কিন্তু রাজ্য সরকার তা করছে না।
বিকাশবাবুর এহেন সওয়াল শোনার পর, রাজ্যের তরফে জানানো হয় – বিকাশবাবু যেহেতু নতুন পয়েন্ট এনেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায় নিয়ে তাই আবার বলার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন – রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল যে ১৯৫৪ সালের রায়ের কথা বলেছিলেন, বিকাশবাবু তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন নথি থেকে দেখিয়েছেন যে ১৯৫৪ সালের রায়ই শেষ কথা নয় – এক্ষেত্রে কোন নতুন পয়েন্ট যোগ হয় নি, সুতরাং রাজ্যের এই আবেদন মঞ্জুর করা যাবে না।
অন্যতম মামলাকারী ও সরকারি কর্মচারী সংগঠন কনফেডারেশনের অন্যতম শীর্ষনেতা সুবীর সাহার সঙ্গে এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগের দিন সময়াভাবে বিকাশবাবুর বক্তব্য পুরো শুনতে পারেননি মাননীয় বিচারপতিরা। তাই আজ বিকাশবাবু তাঁর সওয়াল সম্পূর্ণ করলেন। সওয়ালের সময় সারা কোর্টরুম চত্ত্বরের পরিবেশ এবং বিচারপতিদের ‘অবজারভেশন’ শুনে মনে হয়েছে যে ১৯৫৪ সালের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশবাবু যেসব নথি বা যুক্তি আজ দিয়েছেন তা সদর্থক।
সুবীরবাবু আরো জানান, আজ বিকাশবাবুর সওয়াল শেষ হলেও সময়াভাবে সর্দার আমজাদ আলি আর সওয়ালের সুযোগ পান নি। তাঁর বক্তব্য আদালত আগামী মঙ্গলবার শুনবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে আমজাদ সাহেবের সওয়াল শেষ হলেই আদালত এই ডিএ মামলায় নিজেদের রায় জানিয়ে দেবেন। এখনো পর্যন্ত যেভাবে মামলা এগিয়েছে বা আদালত নিজেদের অবজার্ভেশনে যা জানিয়েছে তাতে সামগ্রিকভাবে আমরা খুশি এবং সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে একটা সদর্থক রায়ের জন্য আশাবাদী।